রোমান্টিক গল্প শেষ বিকালের চিঠি

গল্প: শেষ বিকেলের চিঠি

নীলা ও আরিয়ান—দুই ভিন্ন জগতের মানুষ। একজন বইয়ের পাতায় হারিয়ে থাকা মেয়ে, অন্যজন গিটারের ছয় তারে জীবনের সুর খোঁজা এক তরুণ। দু’জনের দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, ক্লাসরুম ২০৪-এর করিডোরে। প্রথম দেখা, প্রথম কথা—সবই যেন বাতাসে ভেসে থাকা গানের মতো ধীরে ধীরে মনের মধ্যে জায়গা করে নেয়।

নীলার ভেতরটা ছিল নিঃশব্দ, আর আরিয়ানের ভেতরটা ছিল সুরে মোড়ানো। প্রথমদিকে দু’জনেই নিজেদের মতো করে বাঁচছিল—কিন্তু সময়ের সঙ্গে একে অপরের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। নীলা আরিয়ানের গিটার শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকত, আর আরিয়ান নীলার কাঁধে ঝুলে থাকা ডায়েরি দেখতে দেখতেই বলে ফেলত, “তুমি কি কবিতা লেখো?”

দিন কাটে, সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কফি শপে আড্ডা, রাতের শেষে ছোট ছোট মেসেজ, আর সকালে ‘গুড মর্নিং’—সব কিছুই যেন ভালোবাসার অদৃশ্য বন্ধনে বাঁধা। কিন্তু জীবনে সব সময় গল্পটা যেমন চায়, তেমন হয় না।

নীলার বাবা বিদেশে চাকরি করতেন। হঠাৎ একদিন সিদ্ধান্ত এলো—নীলার পরিবার কানাডা চলে যাচ্ছে। নীলা চুপ করে ছিল, কিন্তু চোখে ছিল অশ্রুভেজা স্বপ্নের চিহ্ন। শেষ বিকেলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লন-এ বসে ছিল ওরা দু’জন। সূর্যের শেষ আলো গায়ে পড়ে যেন বলে যাচ্ছিল—এই মুহূর্তটাই চিরন্তন।

“আমি হয়তো চলে যাচ্ছি, কিন্তু তোমার গিটারের সুরটা আমায় সব সময় ডেকে আনবে,” নীলা বলল।

আরিয়ান চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভালোবাসা দূরত্ব বোঝে না। সময় বোঝে না। এটা তো শুধু অনুভবের ব্যাপার, তাই না?”

নীলা ছোট একটা চিঠি বের করে ওর হাতে দিল। বলল, “এটা কাল পড়বে। আমি তখন হয়তো আকাশের ওপার থেকে তোমার সুর শুনছি।”

পরদিন, বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আরিয়ান চিঠিটা খুলল। তাতে লেখা ছিল—

"তুমি যদি কোনোদিন গিটার বাজাতে বাজাতে হঠাৎ থেমে যাও, মনে কোরো—কেউ একদিন বলেছিল, তোমার সুরে ওর হৃদয় বাঁধা ছিল। আমি থাকি তোমার সুরে, তুমি থেকো আমার শব্দে। ভালোবাসা মানে তো একে অপরের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া, তাই না?"

চোখে জল নিয়ে আরিয়ান গিটারটা কাঁধে ঝুলিয়ে বলল, “তুমি দূরে নও নীলা, তুমি আমার প্রতিটা গানের মধ্যে আছো।”

                                      শেষ।


0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন