রোমান্টিক গল্প প্রেমের মরা জলে ডুবেনা

 গল্পের নাম: প্রেমের মরা জলে ডুবেনা

ধরন: রোমান্টিক গল্প
স্থানে: নদীর পাশের ছোট্ট শহর, বাংলাদেশ
চরিত্র: নীলয় ও তৃণা
শব্দসংখ্যা: প্রায় ১০০০


প্রথম পর্ব: ফিরে দেখা

নীলয়ের চোখে আজও সেই বিকেলের নদীর ঘাট ভাসে—যেখানে প্রথম তৃণাকে দেখেছিল। হাতে বই, চোখে চশমা, নদীর ধারে বসে ছিল সে। আর আশপাশের কোলাহল থেকে যেন অনেক দূরে। তখন নীলয় ছাত্র, আর তৃণা নতুন এসেছে শহরে, কলেজে পড়তে।

একটা হালকা হাওয়া বয়ে যায়। তৃণার চুল উড়ে আসে মুখে। নীলয় যেন হাঁপিয়ে ওঠে মুহূর্তেই। ভালোবাসা শুরু ঠিক তখনই, না বলা, না বোঝা এক টান।

দিন কাটে। কলেজের লাইব্রেরি, নদীর পাড়, বইয়ের পাতা আর চা-এর কাপ—সব কিছুতে ওদের প্রেম জমে ওঠে। কিন্তু তৃণা সবসময় একটু দূরত্ব রেখে চলে। নীলয় বোঝে না, তবু কষ্ট লুকিয়ে ভালোবাসে।


দ্বিতীয় পর্ব: প্রেম ও প্রতিজ্ঞা

তৃণার বাবা ছিলেন কড়া প্রকৃতির মানুষ। প্রেম মানেন না। পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অনুমতি নেই। আর তৃণা, বাবার আদর্শের প্রতি বাধ্য। নীলয়কে ভালোবাসে, কিন্তু স্পষ্ট কিছু বলতে পারে না।

একদিন নীলয় সাহস করে বলে বসে,
— "তৃণা, তুমি কি আমায় ভালোবাসো?"
তৃণা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
— "ভালোবাসা বুঝি, কিন্তু বলার সাহস আমার নেই।"

নীলয় মুচকি হেসে বলে,
— "প্রেমের মরা নাকি জলে ডোবে না, দেখো, আমিও ডুবব না। অপেক্ষা করব, যতদিন লাগে।"


তৃতীয় পর্ব: আলাদা পথ, এক হৃদয়

পড়াশোনা শেষ হলে তৃণা চলে যায় ঢাকায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। নীলয় থাকে শহরে, চাকরি খোঁজে। যোগাযোগ কমে আসে, চিঠি লেখা বন্ধ হয়ে যায়, ফোনেও কথা হয় না মাসের পর মাস।

একদিন খবর আসে—তৃণার বিয়ে ঠিক হয়েছে এক প্রফেসরের সঙ্গে। নীলয় ভেঙে পড়ে না, শুধু নদীর ঘাটে গিয়ে বসে। সেই জায়গা, সেই বিকেল, সেই হাওয়া—সব আছে, শুধু তৃণা নেই।

সে নিজেকে বোঝায়, "প্রেমের মরা জলে ডোবে না", এই প্রতিজ্ঞা আমি করেছি, ভাঙবো না।


চতুর্থ পর্ব: ফিরে দেখা (বছর সাত পরে)

নদীর ঘাটে বসে চা খাচ্ছিল নীলয়। পাশেই এক মেয়ের কণ্ঠ, চেনা, খুব চেনা—"এখনো চা খাও নদীর পাড়ে?"

মুখ তুলে দেখে তৃণা। চোখে একটু বয়সের ছাপ, মুখে পরিণতির ছায়া।
— "তুমি?"
— "হ্যাঁ, আমি। বিয়েটা হয়নি শেষমেশ। বুঝলাম, ভালোবাসা ছাড়া সম্পর্ক টেকে না।"

নীলয়ের চোখে জল এসে যায়, তবু হাসে।
— "তবে কি প্রমাণ হলো, প্রেমের মরা সত্যিই জলে ডোবে না?"
তৃণা মাথা নাড়ে—"ডোবে না, কোনোদিন না।"


শেষ পর্ব: নতুন সূর্য

তৃণা এখন এই শহরেই শিক্ষকতা করে। নীলয় একটা ছোট বিজনেস শুরু করেছে। ওদের প্রেম আবার নতুন করে ফুলে ফেঁপে ওঠে, এবার কোনো বাঁধা নেই।

তৃণা একদিন বলে,
— "আমরা যেদিন প্রথম নদীর পাড়ে বসেছিলাম, জানো, তখনই বুঝেছিলাম, এই মানুষটাই আমার।"
নীলয় বলে,
— "ভালোবাসা কখনো হারায় না, শুধু সময় খোঁজে ফিরে আসার।"

তাদের গল্প প্রমাণ হয়ে রইলো—
“প্রেমের মরা জলে ডুবেনা।”



0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন