রোমান্টিক গল্প তুমি যে আমার সাধনা


রাত গভীর, পদ্মার পাড়ে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। চারপাশ নিস্তব্ধ, কেবল দূর থেকে রাজশাহী রেলস্টেশনের হালকা সিটি শব্দ ভেসে আসছে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে একটি শান্ত পাড়ায় ছোট্ট একটি বাড়ির জানালার পাশে বসে পিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছে। তার চোখে ভেসে উঠছে একটি মুখ—প্রিয়া।

প্রিয়া... যার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম দেখা বইমেলায়, শহীদ মিনারের পাশে। নীল শাড়ি পরা মেয়েটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল “রবীন্দ্র রচনাবলী” এর সামনে। পিকে হেসে বলেছিল,
— “রবীন্দ্রনাথের কোন কবিতা তোমার সবচেয়ে প্রিয়?”
প্রিয়া বলেছিল,
— “যেটা এখনো লেখা হয়নি…”

সেই দিনের পর থেকে পিকের হৃদয়ে শুধু প্রিয়া।


প্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্রী, পিকে ইংরেজি সাহিত্যের। প্রথমে চোখাচোখি, তারপর আড্ডা, সময়ের সাথে সাথে বন্ধুত্ব। রাজশাহীর ধীরে চলা জীবনে তাদের সম্পর্কটা ছিল এক রকম বইয়ের পাতার মতো—নিরব, গভীর, গাঢ়।

একদিন পদ্মার পাড়ে বসে প্রিয়া বলেছিল,
— “তুমি জানো? তোমার চোখের গভীরতা আমার খুব ভয় করে।”
পিকে হেসে বলেছিল,
— “তুমি না থাকলে এই চোখ নদী হয়ে শুকিয়ে যাবে।”

তখনো কেউ ভালোবাসার কথা বলেনি, কিন্তু অনুভব ছিল স্পষ্ট।


হঠাৎ একদিন প্রিয়া কলেজে আসা বন্ধ করে দিলো। ফোন বন্ধ, মেসেঞ্জার অফ। পরে জানা গেল, তার বাবা ঢাকায় বদলি হয়েছেন। প্রিয়াকেও নিয়ে গেছেন।

পিকে স্তব্ধ। একরাশ কষ্ট নিয়ে সে প্রতিদিন পদ্মার পাড়ে বসে থাকত। অপেক্ষা করত যদি কোনোদিন প্রিয়া ফিরে আসে।


বছর কেটে যায়। পিকে রাজশাহীতেই একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে। প্রিয়ার স্মৃতি তার জীবনের ছায়া হয়ে থাকে—শহরের প্রতিটি বইমেলা, প্রতিটি পূর্ণিমা রাত, পদ্মার ধারে প্রতিটি একাকিত্ব।

একদিন সাহেব বাজারে ঘুরতে গিয়ে একটি বইয়ের দোকানে চোখে পড়লো একটি নতুন বই:
“তুমি আমার সাধনা” — প্রিয়া সাহা

পিকের বুক কেঁপে উঠলো। প্রথম পাতায় লেখা ছিল:

“যে মানুষটিকে ভালোবেসে বলতে পারিনি,
সে জানে না, সে-ই আমার প্রতিদিনের প্রার্থনা।
পিকে, যদি কখনো এই বইটা পড়ো…
জেনে রেখো, তুমি আমার সাধনা।”


কিছু অনুসন্ধানের পর পিকে জানতে পারলো—প্রিয়া এখন রাজশাহী শহরেই একটি ছোট পাঠাগারে কাজ করছে।
পিকে দ্বিধা, ভয়, কাঁপা পায়ে সেই পাঠাগারে পৌঁছালো।

এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বই গুছাচ্ছিল। মাথা নিচু, শান্ত ভঙ্গি।
পিকে ধীরে বলল,
— “তুমি কি এখনো সাধনায় আছো?”
প্রিয়া মাথা তোলে, চোখে জল, ঠোঁটে হাসি—
— “তুমি আসবে জানতাম।”


শেষ। 

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন