রোমান্টিক গল্প আধুনিক প্রেম

  আধুনিক প্রেম

সকাল দশটা। অফিসের ব্যস্ততার মাঝেও রিয়ার চোখ দুটো আটকে আছে তার স্মার্টফোনের স্ক্রিনে। নীল রঙের একটা টিক চিহ্ন, তারপর দুটো টিক, কিন্তু দ্বিতীয়টা ধূসর। অর্থাৎ মেসেজটা ডেলিভারি হয়েছে, কিন্তু পড়া হয়নি। আর এভাবেই গত দু'ঘণ্টা ধরে ওর মনটা অস্থির। পাঠিয়েছে অর্ণবকে, যার সাথে ওর পরিচয় এই সেদিন, একটা ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে।

অর্ণব, পেশায় স্থপতি, সুদর্শন এবং বেশ ইন্টারেস্টিং। প্রথম অনলাইন চ্যাটেই রিয়ার মনে হয়েছিল, এই ছেলেটা অন্যরকম। ওর কথা বলার ভঙ্গি, রুচিবোধ, সবকিছুই যেন রিয়াকে মুগ্ধ করেছিল। দু'দিন আগে প্রথম দেখা হলো ওদের একটা কফিশপে। প্রথম দেখাতেই যেন এক অদ্ভুত টান অনুভব করেছিল রিয়া। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেছিল ওরা, যেন জন্ম জন্মান্তরের চেনা। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে এই মেসেজ চালাচালি, একে অপরের খোঁজ নেওয়া। কিন্তু আধুনিক সম্পর্কগুলো যেন কাঁচের মতো ভঙ্গুর। কখন কী হয়, কেউ জানে না।

রিয়া আবার মেসেজটা দেখল। "কী করছো?" সিম্পল একটা প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর না পেয়ে হাজারো প্রশ্ন ওর মনে ভিড় করছে। সে কি ব্যস্ত? নাকি ইচ্ছে করেই উত্তর দিচ্ছে না? অন্য কারও সাথে কথা বলছে না তো? এই ডিজিটাল যুগে সম্পর্কগুলো যেমন সহজে গড়ে ওঠে, তেমনই সহজে ভেঙেও যায়। একটা ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝি, একটা মেসেজের উত্তর না দেওয়া, অথবা একটা পুরোনো প্রোফাইলের হঠাৎ সক্রিয়তা – সবকিছুই যেন অবিশ্বাস আর দূরত্বের জন্ম দেয়।

দুপুর দুটো। রিয়ার কাজের ফাঁকে ফোনটা হাতে নিল। নাহ, এখনো কোনো উত্তর নেই। বুকের ভেতর কেমন যেন একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে রিয়া। গতরাতে অর্ণবই তো কত কথা বলেছিল, কত স্বপ্নের কথা ভাগ করে নিয়েছিল। তাহলে আজ হঠাৎ কী হলো?

বিকেলের দিকে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। আননোন নাম্বার। রিয়া দ্বিধা নিয়ে ধরল, "হ্যালো?"

ওপাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠ, "হাই রিয়া, আমি অর্ণব।"

রিয়ার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। "অর্ণব! তুমি! আমি তো তোমাকে মেসেজ করেছিলাম। রিপ্লাই দাওনি কেন?" রিয়ার গলায় অভিযোগের সুর।

অর্ণব হাসল, "আরে বাবা, আমি তখন মিটিংয়ে ছিলাম। আর আমার ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিল। এখন দেখতে পেলাম তোমার মেসেজ। কী হয়েছে?"

রিয়ার রাগটা যেন এক নিমিষেই কর্পূরের মতো উড়ে গেল। একটা গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, "না, কিছু না। এমনিই। ভাবলাম তুমি হয়তো..."

অর্ণব ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "শোনো, আমি জানি এই অনলাইন যোগাযোগে ভুল বোঝাবুঝি হয়। কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করো, আমি তোমার সাথে কোনো লুকোচুরি করছি না। আসলে আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে চাইছিলাম। টেক্সট মেসেজে সব বলা যায় না।"

রিয়া অবাক হয়ে শুনল অর্ণবের কথা। "মানে?"

"মানে, আমি তোমার সাথে আজ সন্ধ্যায় দেখা করতে চাই। একটু কথা ছিল। সামনাসামনি।" অর্ণবের কণ্ঠে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা।

সন্ধ্যায় দেখা হলো ওদের। অর্ণব রিয়ার হাতটা ধরে বলল, "রিয়া, আমি এই আধুনিক প্রেমের জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যেখানে একটা মেসেজের উত্তর না দিলে হাজারো সংশয় দানা বাঁধে। আমি তোমার সাথে একটা সহজ, সাবলীল সম্পর্ক চাই। যেখানে বিশ্বাস থাকবে, নিরাপত্তা থাকবে, আর থাকবে অফুরন্ত ভালোবাসা। তুমি কি আমার সাথে থাকবে?"

রিয়ার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল। এই তো সেই ভালোবাসার খোঁজ, যা ও এতদিন ধরে খুঁজছিল। আধুনিক প্রেমের জটিলতা পেরিয়ে, ওরা দুজন একে অপরের হাত ধরল এক নতুন সম্পর্কের দিকে, যেখানে সত্যিকারের অনুভূতির মূল্য অনেক বেশি। যেখানে ভার্চুয়াল স্ক্রিনের বদলে চোখে চোখ রেখে কথা বলা হবে, আর প্রতিটি ছোঁয়ায় থাকবে ভালোবাসার গভীরতা।


0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন