গল্প: লাবনীর ভালোবাসা
(শব্দ সংখ্যা: প্রায় ১০০০)
চরিত্রে পিকে ও লাবনী
পর্ব ১: নতুন শহর, নতুন মানুষ
লাবনী ঢাকায় নতুন এসেছে। ময়মনসিংহ থেকে অনার্স পড়তে এসে মিরপুরের একটি মেসে উঠেছে। মেধাবী, শান্তশিষ্ট এবং একটু লাজুক মেয়েটি প্রতিদিন ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে সময় কাটায়। শহরের কোলাহল তার ভালো লাগে না, কিন্তু পড়ালেখার স্বপ্ন তাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।
প্রথম দিনই ক্লাসে পিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। পিকে ঢাকা শহরের ছেলে—স্বভাবতই চঞ্চল, প্রাণবন্ত, আর খুবই কথা বলা টাইপ। লাবনী একেবারে বিপরীত। তবুও পিকে মাঝে মাঝে তার পাশে এসে বসে, কোনো অজুহাতে কিছু কথা বলে। লাবনী প্রথমে বিরক্ত হলেও ধীরে ধীরে খেয়াল করে—পিকের দৃষ্টিতে এক ধরনের সম্মান আছে, ভদ্রতা আছে।
পর্ব ২: লাবনীর ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের শুরু
দিন যায়, মাস পেরোয়। লাইব্রেরিতে দেখা, ক্লাসে একসাথে প্রজেক্ট করা—এভাবেই তাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়। একদিন বিকেলে পিকে লাবনীকে জিজ্ঞেস করে,
— “তুমি কি কখনো ঢাকার বাইরে সূর্যাস্ত দেখেছো?”
লাবনী অবাক হয়ে বলে, “না তো… কিন্তু কেন?”
— “তবে চল একদিন। টংগীর পাশে একটা জায়গা আছে, সন্ধ্যায় খুব সুন্দর সূর্য নামে। একেবারে নীলচে কমলা আকাশ…”
লাবনী একটু দ্বিধায় পড়ে। কিন্তু পিকের চোখের সারল্য তাকে না বলতে দেয় না।
পর্ব ৩: ভালোবাসার রং
সেই সূর্যাস্তের দিনটাই ছিল মোড় ঘোরানোর দিন। নদীর ধারে বসে দুজনে অনেক কথা বলে। পিকের পরিবার, তার হারিয়ে যাওয়া মা, আর স্বপ্নগুলো—সব শোনে লাবনী। লাবনীর চোখে পানি আসে।
পিকে বলে, “তোমার মতো কাউকে পাশে পেলে জীবনটা হয়তো বদলে যেত।”
লাবনী কিছু বলে না। শুধু চোখ তুলে চায় পিকের দিকে।
সেদিন থেকে তাদের সম্পর্ক এক নতুন রঙ পায়। সেটা বন্ধুত্ব না ভালোবাসা—তারা কেউই তখন বুঝে উঠতে পারে না।
পর্ব ৪: সংকট
সব গল্পে ঝড় আসে। লাবনীর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাড়ি থেকে ফোন আসে—মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে, কারণ বাবার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয়।
লাবনী ভেঙে পড়ে। সে পিকেকে কিছুই জানায় না, শুধু হঠাৎ একদিন শহর ছেড়ে চলে যায়।
পিকে খুঁজে পায় না। লাইব্রেরির সিট ফাঁকা থাকে। প্রিয় বন্ধুটি হঠাৎ হারিয়ে যায়।
পর্ব ৫: প্রত্যাবর্তন
ছয় মাস পর, একদিন হঠাৎ লাবনী ফিরে আসে। তার চোখে আগের সেই স্বপ্ন নেই। কিন্তু মুখে এক ধরনের স্থিরতা।
সে পিকেকে দেখে, বলে—
— “বিয়ে করিনি। পারিনি। আমি জানি, জীবনটা কঠিন। কিন্তু আমি শুধু তোমার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম, নিজের জন্য নয়—তোমার জন্য। এখন যদি বলো, আমি আবার আসতে পারি…”
পিকে চোখ সরায় না লাবনীর চোখ থেকে। সে শুধু বলে—
— “আমি তো সেই দিন থেকেই অপেক্ষা করছিলাম… সূর্যটা আবার আমাদের জন্য ডুবে যাবে।”
শেষ দৃশ্য:
এক বিকেলে টংগীর নদীর পাশে দাঁড়িয়ে লাবনী আর পিকে সূর্যাস্ত দেখছে। চারদিকে নরম আলো। দুজনের হাত একে অপরের হাতে।
লাবনীর ভালোবাসা হারায়নি। শুধু সময় নিয়েছিল নিজেকে প্রমাণ করার।
শেষ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন